বিসিএস (BCS) পরীক্ষা হল বাংলাদেশের সরকারি চাকরির জন্য সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক এবং সম্মানজনক পরীক্ষা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) এর অধীনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের প্রশাসনিক, শিক্ষা, পুলিশ, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সরকারি ক্যাডারে নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়। কিন্তু কিভাবে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়?
এই আর্টিকলের মধ্য দিয়ে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো। আমরা জানবো, বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা পদ্ধতি এবং এসব পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবন্টন।
বিসিএস (BCS) পরীক্ষা পদ্ধতি
বিসিএস পরীক্ষায় ৩টি ধাপ রয়েছে-
- প্রিলিমিনারি (Preliminary),
- লিখিত (Written)
- এবং ভাইভা (Viva) পরীক্ষা।
প্রতিটি ধাপই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি ধাপ সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। চলুন ধাপগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানি।
আরও পড়ুন: বিসিএস (BCS) পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা: খুঁটিনাটিসহ বিস্তারিত তথ্য
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মূলত প্রাথমিক বাছাইয়ের ধাপ হিসেবে কাজ করে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আপনি পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন।
তবে এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর পরবর্তী কোনো ধাপে যোগ হয় না। পুরো পরীক্ষাটি ২০০ নম্বরের হবে।
নিচে বিস্তারিতভাবে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়সমূহ, মানবন্টন, সিলেবাস এবং পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে-
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়সমূহ, মানবন্টন ও সিলেবাস
বিষয়
|
মোট নম্বর
|
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
|
৩৫
|
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
|
৩৫
|
গাণিতিক যুক্তি
|
১৫
|
বাংলাদেশ বিষয়াবলী
|
৩০
|
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী
|
২০
|
সাধারণ বিজ্ঞান
|
১৫
|
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
|
১৫
|
ভূগোল,পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা
|
১০
|
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
|
১০
|
মানসিক দক্ষতা
|
১৫
|
মোট নম্বর
|
২০০
|
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করুন
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পদ্ধতি
এই সেকশন হতে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো-
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ২০০ নম্বরের এমসিকিউ (MCQ) প্রশ্ন থাকে, যেখানে প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর। পরীক্ষায় ৪টি অপশনের মধ্যে সঠিক উত্তরটি OMR শিটে পূরণ করতে হয়।
তবে এখানে নেগেটিভ মার্কিংও আছে, অর্থাৎ প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা হবে। সহজভাবে বলতে গেলে, যদি আপনি ২টি প্রশ্ন ভুল করেন তাহলে আপনার ১ নম্বর কাটা যাবে।
প্রিলি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল বিশাল সংখ্যক প্রার্থীর মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা। পরীক্ষায় পাশ করলে আপনি লিখিত পরীক্ষার জন্য সুযোগ পাবেন, যা বিসিএস পরীক্ষার পরবর্তী ধাপ।
লিখিত পরীক্ষা
বিসিএস পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ হল লিখিত পরীক্ষা। এটি মূলত প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য ৯০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা।
সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কয়েক মাস পর এই রিটেন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তবে এটি নির্ভর করে সরকারি সিদ্ধান্তের উপর। সাধারণত ৩-৬ মাসের মাধ্যেই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ ক্যাডার এবং কারিগরি ক্যাডারের জন্য বিষয়ভিত্তিক নম্বরের কিছুটা পার্থক্য আছে। এসব বিষয়ে আমরা এই সেকশন হতে বিস্তারিত জানবো।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়সমূহ, মানবন্টন ও সিলেবাস
সাধারণ ক্যাডার এর ক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক মানবন্টন-
বিষয়
|
নম্বর
|
বাংলা
|
২০০
|
ইংরেজি
|
২০০
|
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
|
১০০
|
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
|
১০০
|
বাংলাদেশ বিষয়াবলী
|
২০০
|
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী
|
১০০
|
মোট নম্বর
|
৯০০
|
কারিগরি ক্যাডার এর ক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক মানবন্টন-
বিষয়
|
নম্বর
|
বাংলা
|
১০০
|
ইংরেজি
|
২০০
|
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
|
১০০
|
পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়
|
২০০
|
বাংলাদেশ বিষয়াবলী
|
২০০
|
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী
|
১০০
|
মোট নম্বর
|
৯০০
|
লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করুন
উল্লেখ্য যে, কোনো প্রার্থী যদি উভয় ক্যাডারে আবেদন করেন, তাহলে তাকে ৯০০ নম্বরের সাধারণ ক্যাডারের পরীক্ষার পাশাপাশি ২০০ নম্বরের পদ-সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাও দিতে হবে। অর্থাৎ মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থী বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো ভাষায় উত্তর দিতে পারেন। তবে এখানে উত্তরের ভাষার উপর নম্বর নির্ভর করে না; বরং উত্তর লেখার মানই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লেখার মান বলতে মূলত উত্তরটি কতটা স্পষ্ট, তথ্যবহুল এবং যুক্তিসঙ্গত তা বিবেচনা করা হয়। একজন পরীক্ষার্থী চাইলে উভয় ভাষায় মিলিয়ে উত্তরও দিতে পারেন, তবে লেখার ধারাবাহিকতা ও বোধগম্যতা বজায় রাখতে হবে।
লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে পাশ করতে। পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয়।
লিখিত পরীক্ষার উত্তীর্ণ নম্বরের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়, তাই এখানে ভালো ফলাফল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লিখিত পরীক্ষায় বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন-
- উত্তরটি কতটা বিশদ ও যুক্তিসঙ্গত।
- বিষয়ের মূল কাঠামো ধরে রেখে উত্তর লেখা।
- প্রয়োজনীয় উদাহরণ এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য ব্যবহার করা।
- প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান এবং কোনোকিছু এড়িয়ে না যাওয়া।
- সঠিক বানান এবং ব্যাকরণের ব্যবহার।
ভাইভা পদ্ধতি
বিসিএস পরীক্ষার তৃতীয় এবং শেষ ধাপ হলো ভাইভা পরীক্ষা, যাকে মৌখিকও পরীক্ষা বলা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এই ১০০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই সেকশন থেকে আমরা বিসিএস এর ভাইভা পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
ভাইভা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে মূলত প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা, সাধারণ জ্ঞান, এবং সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের জন্য তার মানসিক প্রস্তুতি যাচাই করা হয়।
ভাইভা পরীক্ষায় পাস নম্বর ৫০%, অর্থাৎ পাশের জন্য আপনাকে অন্তত ৫০ নম্বর পেতে হবে। তবে এখানে লিখিত পরীক্ষার মতো শুধুমাত্র প্রাপ্ত নম্বরের ওপর নির্ভর করে ফলাফল নির্ধারণ হয় না।
ভাইভার সময় আপনার উপস্থিতি, আত্মবিশ্বাস, এবং প্রশ্নের উত্তরে যৌক্তিকতা, ধৈর্য এবং সচেতনতার মতো গুণাগুণের দিকে নজর রাখা হয়।
ভাইভা পরীক্ষায় সাধারণত যে ধরনের প্রশ্ন করা হয়-
- ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত পটভূমি: আপনার নিজের পরিচয়, শিক্ষাজীবন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা হতে পারে।
- সংশ্লিষ্ট ক্যাডার বা পদ সম্পর্কে জ্ঞান: আপনি যেই ক্যাডারের জন্য আবেদন করেছেন, তার গুরুত্ব, দায়িত্ব ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে।
- সাধারণ জ্ঞান: দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা, সাধারণ জ্ঞান বা ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে।
- নৈতিকতা ও মূল্যবোধ: আপনার ব্যক্তিত্বের নৈতিক দিক যাচাই করার জন্য কিছু প্রশ্ন করা হতে পারে, যেমন কোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরণ।
ভাইভা পরীক্ষা লিখিত পরীক্ষার মতো কঠিন না হলেও এখানে উপস্থিতি এবং আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় শুধু জ্ঞান অর্জনের দিকে নয়, আত্মবিশ্বাস এবং উপস্থাপনার ওপরও জোর দেয়া জরুরী।
আরও পড়ুন: এক নজরে দেখে নিন বিসিএস পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর
বিসিএস ক্যাডার তালিকা
চলুন এক নজরে বিসিএস ক্যাডার তালিকা দেখে নিই-
নাম
|
ধরণ
|
বিসিএস প্রশাসন
(BCS Administration Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস কৃষি
(BCS Agriculature Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস আনসার
(BCS Ansar Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব
(BCS Audit & Accounts Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস সমবায়
(BCS Cooperative Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস শুল্ক ও আবগারি
(BCS Customs & Excise Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা
(BCS Family Planning Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস মৎস্য
(BCS Fisheries Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস খাদ্য
(BCS Food Cadre)
|
সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস পররাষ্ট্র
(BCS Foreign Affairs Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস বন
(BCS Forest Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা
(BCS General Education Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস স্বাস্থ্য
(BCS Health Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস তথ্য
(BCS Information Cadre)
|
সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস পশু সম্পদ
(BCS Livestock Cadre)
|
সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস পুলিশ
(BCS Police Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস ডাক
(BCS Postal Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল
(BCS Public Health Engineering Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস গণপূর্ত
(BCS Public Works Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস রেলওয়ে প্রকৌশল
(BCS Railway Engineering Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক
(BCS Railway Transportation & Trade Cadre)
|
সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস সড়ক ও জনপথ
(BCS Road & Highway Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস পরিসংখ্যান
(BCS Statistical Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস কর
(BCS Tax Cadre)
|
সাধারণ ক্যাডার
|
বিসিএস কারিগরি শিক্ষা
(BCS Technical Education Cadre)
|
কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
বিসিএস বাণিজ্য
(BCS Trade Cadre)
|
সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
|
শেষ কথা
বিসিএস পরীক্ষায় সফলতার জন্য প্রতিটি ধাপেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
প্রিলিমিনারি থেকে শুরু করে লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করার মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত ক্যাডারে স্থান পাওয়া সম্ভব।
সুতরাং যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান, তাদের জন্য সঠিক প্রস্তুতি এবং ধৈর্যই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
Comments