আপনি ১৯তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন (NTRCA) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান কিন্তু কীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে জানতে চান? স্বাগতম! আপনি সঠিক পেইজেই এসেছেন।
এই আর্টিকেলটিতে NTRCA এর প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি ও কৌশল, সিলেবাস এবং টিপস নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
যারা ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এটি হতে পারে একটি আদর্শ গাইড। চলুন, প্রস্তুতি শুরু করা যাক!
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন (NTRCA) পরীক্ষার প্রস্তুতি
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়মিত অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। তিন ধাপে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়:
- প্রিলিমিনারি
- লিখিত ও
- মৌখিক
প্রিলিমিনারি এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া খুব একটা কঠিন কিছু নয়। তবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে আপনাকে ভাল প্রস্তুতি নিয়ে একজন ভাল প্রতিযোগী হতে হবে।
কারণ, লিখিত পরীক্ষায় নির্দিষ্ট কোন পাস নম্বর না থাকায় প্রতিযোগিতা অনেক বেশী হয়। লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশী নম্বর প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
এজন্য আপনি যেটা করতে পারেন, প্রিলি এবং রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি একই সঙ্গে নিতে পারেন। কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন?
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মধ্য দিয়ে আপনি প্রিলি, রিটেন এবং ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় টিপস, সিলেবাস, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারবেন।
শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে পরীক্ষার মানবণ্টন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
পরীক্ষাটি মোট ১০০ নম্বরের MCQ (Multiple Choice Question) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর এবং পাস নম্বর ৪০।
এখানে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হয়। তাই নেগেটিভ মার্কিং এর বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানবন্টন
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক মানবণ্টন নিম্নরূপ:
বিষয়
|
মার্ক
|
বাংলা
|
২৫
|
ইংরেজি
|
২৫
|
গণিত
|
২৫
|
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক), বিজ্ঞান ও আইসিটি
|
২৫
|
মোট
|
১০০
|
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস
শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নিতে হলে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের সিলেবাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আসুন, এবার এক নজরে বিষয়ভিত্তিক টপিকগুলো দেখে নিই।
বাংলা (২৫ নম্বর)
বাংলা বিষয়ে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে, প্রতিটির মান ১। এই অংশে ভালো করতে হলে নিচের টপিকগুলোতে জোর দিতে হবে:
- ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার
- ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ
- বাগধারা ও বাগবিধি
- যথার্থ অনুবাদ, সন্ধি বিচ্ছেদ
- কারক ও বিভক্তি
- সমাস ও প্রত্যয়
- সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ
- বাক্য সংকোচন
- লিঙ্গ পরিবর্তন
বাংলা সাহিত্য এবং ব্যাকরণের এই অংশে পরীক্ষায় বেশ কিছু জটিল প্রশ্ন আসতে পারে, তাই অনুশীলনের বিকল্প নেই।
ইংরেজি (২৫ নম্বর)
ইংরেজি অংশেও ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। এখানে মূলত ব্যাকরণ ও শব্দভাণ্ডারের ওপর জোর দেওয়া হয়। যা পড়তে হবে:
- Sentences
- Change of Parts of Speech
- Transformation of Sentences
- Right Forms of Verb
- Synonyms & Antonyms
- Idioms & Phrases
- Fill in the Blanks
- Translation from Bengali to English
কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত কয়েকটি টপিক পড়তে হবে। যেমন:
- Identify appropriate title from a story or article
- Errors in composition
- Uses of Articles
- Appropriate Prepositions
সাধারণ গণিত (২৫ নম্বর)
গণিত অংশে সাধারণত পাটিগণিত, বীজগণিত এবং জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন আসে। এই অংশে পড়তে হবে:
পাটিগণিত:
- গড়
- একক নিয়ম
- লসাগু, গসাগু
- সুদ, লাভ-ক্ষতি
- শতাংশ ও অনুপাত
বীজগণিত:
- বাস্তব সংখ্যা
- বর্গাকার ও ঘনক
- সূচক ও লগারিদম
- বীজগাণিতিক সূত্র ও তাদের ব্যবহার
জ্যামিতি:
- রেখা, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, কোণ
- ক্ষেত্রফল
- বৃত্তের সাধারণ ধারণা
গণিত অংশ দ্রুত সমাধান করতে নিয়মিত প্র্যাকটিস ও শর্টকাট নিয়ম জানা জরুরি।
সাধারণ জ্ঞান (২৫ নম্বর)
সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নগুলো সাধারণত বাংলাদেশ বিষয়াবলী, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী,আইসিটি ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত হয়ে থাকে। যেমন-
বাংলাদেশ বিষয়াবলী:
- ইতিহাস: ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ব্যবস্থা
- ভূগোল ও জলবায়ু: নদী, পাহাড়, বনাঞ্চল
- অর্থনীতি ও সম্পদ: কৃষি, শিল্প, পানি সম্পদ
- জাতীয় দিবস ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান
- শিক্ষা ও সংস্কৃতি
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী:
- জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা
- ভৌগোলিক উপনাম ও মুদ্রা
- জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ
- গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দিবস
- সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনা ও পুরস্কার
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি:
- পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণা
- স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও সাধারণ রোগ, পরিবেশ বিজ্ঞান
- তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন আপডেট বিষয়াবলি
সাম্প্রতিক অংশে ভালো করতে হলে প্রতিদিন সাম্প্রতিক খবর এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন-
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করতে হলে সঠিক গাইডলাইন, প্ল্যান এবং প্র্যাকটিসের বিকল্প নেই। NTRCA-এর শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিও এর ব্যতিক্রম নয়।
এই পরীক্ষায় সফল হতে হলে প্রয়োজন সঠিক কৌশল ও মনোযোগ। চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে এই পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করবেন এবং বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করবেন।
নিজেকে প্রস্তুত করুন
১. পেশা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন: আপনি যদি একজন শিক্ষক হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে চান, তাহলে এই সিদ্ধান্তকে হৃদয়ে ধারণ করুন।
মনে রাখবেন, শিক্ষকতার পেশা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয়; বরং এটি সম্মান, মর্যাদা, এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জনের পথ।
২. দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন: সিদ্ধান্ত নেয়ার পর নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করুন যে আপনি এই পরীক্ষায় সফল হবেন। যেকোনো বাধা পেরিয়ে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে।
৩. রুটিন তৈরি করুন: পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট রুটিন বানিয়ে নিন। কোন দিন কোন বিষয় এবং টপিক পড়বেন, কতক্ষণ পড়বেন এসব বিস্তারিত পরিকল্পনা করলে পড়াশোনার গতি বাড়বে।
৪. বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করুন: বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করুন। এতে সিলেবাসের কোন টপিক থেকে কেমন প্রশ্ন আসে তা বুঝতে পারবেন।
৫. মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করুন: প্রতিটি টপিক ভালোভাবে বুঝে পড়ুন। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও নজর দিন। যেমন, আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা নিয়ে পড়লে তার সহযোগী সংস্থা ও কার্যক্রম সম্পর্কেও জেনে নিন।
পড়ার কৌশল
- শব্দ করে পড়ুন, যাতে আপনি নিজেই শুনতে পান। এতে মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।
- পড়ার পাশাপাশি নোট তৈরি করুন। লিখে পড়লে তথ্য মনে রাখা সহজ হয়।
- প্রতিদিন যা পড়ছেন, তা পুনরায় রিভিশন দিয়ে ঝালাই করে নিন।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কৌশল
বাংলা
বাংলা অংশে ব্যাকরণ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, তবে সাহিত্য অংশও গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্যাকরণ: ভাষারীতি, বাগধারা, সন্ধি বিচ্ছেদ, সমাস, কারক-বিভক্তি, শব্দের বিপরীতার্থক ও সমার্থক অর্থ ইত্যাদি এগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।
- সাহিত্য: প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য, আধুনিক যুগের সাহিত্যিকদের কর্ম, ছদ্মনাম, উপাধি, পত্রিকা ও সাময়িকী এসব বিষয়ে জানুন।
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই আপনার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
ইংরেজি
ইংরেজি বিষয়ে ভালো করতে হলে প্রতিদিন প্র্যাকটিস করতে হবে।
- টপিক: Grammar (sentences, transformation, articles, prepositions), vocabulary (synonyms, antonyms), এবং translation।
- কলেজ পর্যায়: Identify appropriate title, Errors in composition, Uses of article এবং appropriate preposition ইত্যাদি টপিকগুলোও পড়তে হবে।
গণিত
গণিতের ভালো প্রস্তুতি পরীক্ষার রেজাল্টে বড় ভূমিকা রাখে।
- টপিক: পাটিগণিত, বীজগণিত এবং জ্যামিতির উল্লিখিত টপিকগুলো পড়তে হবে।
- বিগত সালের বিসিএস,প্রাইমারি ও নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নগুলো প্র্যাকটিস করুন।
- ইউটিউব থেকে গণিত টিউটোরিয়াল দেখে সমস্যা সমাধানের কৌশল শিখুন।
- নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন এবং গণিতের টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখুন।
সাধারণ জ্ঞান
এই অংশে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, চলতি ঘটনাবলি, এবং বিজ্ঞান ও আইসিটি সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে।
- বাংলাদেশ বিষয়ক টপিক: ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ভূগোল, অর্থনীতি, বিখ্যাত স্থান, জাতীয় দিবস ইত্যাদি।
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: আন্তর্জাতিক সংস্থা, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি, পুরস্কার ও সম্মাননা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি।
- বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, পরিবেশ এবং রোগব্যাধি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইত্যাদি।
এছাড়াও ভালো প্রস্তুতির জন্য বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার জব সল্যুশন ফলো করুন।
মডেল টেস্ট দিন
পড়াশোনা করার পাশাপাশি যত বেশি সম্ভব মডেল টেস্ট দিন। এতে টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং প্রশ্ন দ্রুত বোঝার ক্ষমতা বাড়বে।
আরও পড়ুন: NTRCA সম্পর্কিত বারবার জিজ্ঞাসাকৃত প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে যা NTRCA কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ।
এই পরীক্ষাটি ঐচ্ছিক বিষয়ের উপর ১০০ নম্বরের এবং সময় বরাদ্দ থাকবে ৩ ঘণ্টা। পরীক্ষার ধরণ এবং সিলেবাস পর্যায়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন।
স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ এবং কলেজ পর্যায়ের জন্য সাবজেক্টভিত্তিক নির্ধারিত সিলেবাস অনুসরণ করতে হবে। আসুন সিলেবাস এবং প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
স্কুল পর্যায় লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস
লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে আপনি চুড়ান্তভাবে মনোনীত হবেন কি না। তাই এই ধাপে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। প্রথমেই স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসটি ভালোভাবে বুঝে নিন।
- এই পর্যায়ের সিলেবাসে সাধারণত বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন আসে।
- আপনি যে সাবজেক্ট থেকে বা যে গ্রুপ থেকে আবেদন করেছেন সেই অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন হবে। যেমনঃ বাংলা,ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান,ভৌত বিজ্ঞান,গণিত,ভূগোল ইত্যাদি।
- বিগত বছরের প্রশ্নপত্রগুলো বিশ্লেষণ করে টপিকগুলো মার্ক করুন এবং সেই অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করুন।
NTRCA কর্তৃক প্রদত্ত সম্পূর্ণ স্কুল পর্যায় সিলেবাস (লিখিত) ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
স্কুল পর্যায় ২ লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস
যারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সফল হবেন তারাই কেবল লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। ইবতেদায়ী মৌলভী, ইবতেদায়ী শিক্ষক (সাধারণ) এবং ইবতেদায়ী ক্কারী পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস আলাদাভাবে তৈরি করা হয়।
সিলেবাসের প্রধান বিষয়গুলো:
- ইসলামী শিক্ষা: আরবি ও ইসলামী স্টাডিজের মৌলিক বিষয়।
- শিক্ষণ কৌশল: ছোট শিশুদের শেখানোর পদ্ধতি এবং মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান।
- সাধারণ জ্ঞান: বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সামাজিক পরিবেশ।
- বাংলা ও ইংরেজি ভাষা: ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং ব্যবহারিক জ্ঞান।
টিপস: ইবতেদায়ী পর্যায়ের জন্য বোর্ড বই এবং ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।
NTRCA কর্তৃক প্রদত্ত সম্পূর্ণ স্কুল পর্যায়-২ সিলেবাস (লিখিত) ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
কলেজ পর্যায় লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস
যারা বেসরকারি কলেজের প্রভাষক, ইন্সট্রাক্টর (টেক ও নন-টেক) বা প্রদর্শক পদে আবেদন করেছেন, তারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সিলেবাসের কাঠামো:
- বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন: আপনি যে সাবজেক্ট থেকে বা যে গ্রুপ থেকে আবেদন করেছেন সেই অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন হবে। যেমনঃ বাংলা, ইংরেজি,গণিত,পদার্থ,রসায়ন ইত্যাদি
NTRCA কর্তৃক প্রদত্ত সম্পূর্ণ কলেজ পর্যায় সিলেবাস (লিখিত) ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রস্তুতির কৌশল:
- আপনার নির্দিষ্ট সাবজেক্ট থেকে সিলেবাস অনুসারে ভালোভাবে পড়াশোনা করুন।
- নিয়মিত মডেল টেস্ট এবং প্রশ্নপত্র সমাধান করুন।
- সংশ্লিষ্ট বিষয়ের রেফারেন্স বইগুলো পড়ুন।
যেভাবে শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন
শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করার আগে একটা বিষয় মাথায় রাখুন- এই পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরই নির্ধারণ করবে, আপনি চূড়ান্তভাবে শিক্ষক নিবন্ধনের তালিকায় জায়গা পাবেন কি না।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস নম্বর পেলে আপনি শুধু লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। তবে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলই আপনাকে একজন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে সহায়তা করবে।
তাই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় অবশ্যই বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নিই কিভাবে সঠিক কৌশলে শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা যায়।
প্রথম ধাপ: সিলেবাস ভালোভাবে বুঝে নিন
লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই আপনার পর্যায়ের নির্ধারিত সিলেবাস ভালোভাবে পড়তে হবে।
সিলেবাসের প্রতিটি অংশ ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখুন এবং কোন কোন বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা মার্ক করুন।
স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ (ইবতেদায়ী শিক্ষক/জুনিয়র শিক্ষক) এবং কলেজ পর্যায়ের (প্রভাষক) পরীক্ষার প্রস্তুতির কৌশল পুরোপুরি আলাদা। আর তাই প্রস্তুতির সময় সিলেবাস অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির কার্যকর কৌশল
১. বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করুন
- সিলেবাসে উল্লেখ করা টপিকগুলো আগে মার্ক করুন।
- বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বা বিষয়গুলো নোট করে রাখুন।
- মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, এবং স্নাতক পর্যায়ের প্রাসঙ্গিক বইগুলো থেকে এই টপিকগুলো সময় দিয়ে পড়ুন।
২. নিয়মিত নোট তৈরি করুন
যে বিষয়গুলো পড়ছেন সেগুলো সহজ ভাষায় নোট করে রাখুন।
- সংক্ষিপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক নোট তৈরি করলে পরীক্ষার আগে রিভিশন করতে সুবিধা হবে।
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সূত্র এবং উদাহরণগুলো নোটে লিখে রাখুন।
৩. লেখার অনুশীলন করুন
লিখিত পরীক্ষায় উত্তর লিখতে সময় কম পাওয়া যায়, তাই নিয়মিত লেখার অনুশীলন করা খুবই জরুরি।
- প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট ধরে রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর লিখুন।
- হাতের লেখা সুন্দর হওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে লেখা স্পষ্ট এবং পাঠযোগ্য হওয়া দরকার।
- পরীক্ষার সময়সীমার মধ্যে দ্রুত ও গুছিয়ে উত্তর দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. সময়ের সঠিক ব্যবহার শিখুন
লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর সব প্রশ্ন একবার ভালোভাবে পড়ে নিন।
- কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার জন্য সহজ এবং কম সময়ে লেখা সম্ভব তা আগে বেছে নিন।
৫. সব প্রশ্নের উত্তর দিন
প্রশ্ন যত কঠিনই হোক না কেন, কোনো প্রশ্নের উত্তর না করে খালি রেখে আসবেন না।
- অল্প জানা থাকলেও সহজ ভাষায় নিজের মতো করে লিখে চেষ্টা করুন,সেজন্য অবশ্যই পূর্ব ধারণা থাকতে হবে। ফলে লিখিত প্রিপারেশনের ক্ষেত্রে অন্তত সবগুলো বিষয় একবার চোখ বুলিয়ে রাখবেন।
- পয়েন্ট অনুযায়ী উত্তর দিলে কম সময়ে বেশি তথ্য উপস্থাপন করা সম্ভব।
প্রস্তুতির জন্য বিশেষ টিপস
- প্রতিদিন একটি রুটিন মেনে নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনা করুন।
- বন্ধু বা সহপাঠীদের সাথে পড়াশোনার টপিকগুলো নিয়ে আলোচনা করুন, এতে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে।
- অনলাইন/অফলাইন মডেল টেস্ট (Model Test) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করুন।
- পরীক্ষার আগে বিগত ৩-৫ বছরের প্রশ্নপত্র ভালোভাবে সমাধান করুন।
ভাইভা পরীক্ষার মানবন্টন
ভাইভা পরীক্ষায় মোট ২০ নম্বর রাখা হয়। এর মধ্যে ১২ নম্বর দেওয়া হয় আপনার শিক্ষা সনদের ওপর ভিত্তি করে, আর বাকি ৮ নম্বর মৌখিক প্রশ্নের জন্য।
সাধারণত, SSC, HSC এবং অনার্স এই তিনটি ধাপের সনদ থেকে ৪ নম্বর করে মোট ১২ নম্বর নির্ধারণ করা হয়।
- SSC ও HSC-তে জিপিএ-৪ বা তার বেশি থাকলে প্রার্থীরা ওই ধাপে পুরো ৪+৪ = ৮ নম্বর পেয়ে যান।
- আর অনার্স পর্যায়ে যদি আপনার প্রথম বিভাগ থাকে বা ৪ স্কেলের সিজিপিএতে অন্তত ৩ থাকে, তাহলে সেখানেও ৪ নম্বর পাওয়া যায়।
পাস করতে কী লাগবে?
স্কুল ও কলেজ, উভয় পর্যায়ের জন্য ভাইভায় পাস করার জন্য ৪০ শতাংশ নম্বর প্রয়োজন। তবে একটা মজার ব্যাপার হলো ভাইভা বোর্ডে আপনার প্রাপ্ত নম্বর সনদে উল্লেখ করা হলেও জাতীয় মেধাতালিকায় এই নম্বর গণনায় ধরা হয় না।
অনেকে ভাবেন যে ভাইভায় ফেল করার ঝুঁকি বেশি কিন্তু বাস্তবে ভাইভায় অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
কেবলমাত্র যদি আপনার কাগজপত্রে কোনো অসামঞ্জস্য থাকে বা আপনি একেবারেই কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন কেবল তখনই এরকম সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি
শিক্ষক নিবন্ধন (NTRCA) ভাইভা পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রায় সকল প্রশ্নই করা হয় সাবজেক্টিভ অংশ থেকে। তাই প্রস্তুতি নিতে হলে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:
- স্নাতক পর্যায়ের বই ভালোভাবে পড়ুন:
স্নাতক পর্যায়ের আপনার ডিপার্টমেন্টের যে বইগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিলো এবং NTRCA’র সিলেবাসভুক্ত সেগুলো ভালোভাবে রিভিশন দিন।
- আপনার সাবজেক্টের দক্ষতা বাড়ান:
আপনি যে বিষয়ের শিক্ষক হবেন সেই বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি এবং পরিষ্কার ধারণা থাকা খুবই দরকার। শিক্ষার্থীদের শেখাতে হলে সেই বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
- সমসাময়িক বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিন:
ভাইভা বোর্ডে শুধু বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নই নয়, সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কিছু প্রশ্ন করা হতে পারে। যেমন:
- সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা।
- নিজের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
- বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
- ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত তথ্য।
- বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং আপনার নিজ জেলার ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিষয়:
- বাংলাদেশের পরিসংখ্যান, অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য।
- এসডিজি সম্পর্কিত তথ্য।
কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
- লিখিত সিলেবাস আরেকবার দেখে নিন: আপনার নির্দিষ্ট বিষয়ের সিলেবাস থেকেই প্রশ্ন করা হবে।
- গবেষণামূলক পড়াশোনা করুন: শুধু মুখস্ত না করে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
- নিজেকে আপডেট রাখুন: সংবাদপত্র বা অনলাইন থেকে ভাইভা প্রস্তুতি ও সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন।
শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা পরীক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যেমন দরকার, তেমনি বাংলাদেশের সামগ্রিক বিষয়েও আপনার জ্ঞান থাকলে আপনার প্রস্তুতি ভালো হবে এবং আপনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
পাস নম্বর নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, সাধারণ ভাইভার মতো বিষয়ভিত্তিক এবং ব্যক্তিগত প্রস্তুতি ভালোভাবে নিয়ে যান। এর মাধ্যমেই চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতি বই : কোন বইটি বেছে নেবেন?
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যদি ভালো মানের বই খুঁজে থাকেন, তবে বিদ্যাবাড়ি পাবলিকেশনের NTRCA ডাইজেস্ট প্লাস হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। বইটিতে প্রিলিমিনারির পাশাপাশি নমুনা ভাইভা এবং বিগত পরীক্ষার রিটেন পরীক্ষা সমূহের প্রশ্ন সংযোজন করা আছে।
কেন NTRCA ডাইজেস্ট প্লাস বইটি পড়বেন?
- প্রথমবারেই সফলতার সুযোগ:
১৯তম নিবন্ধন পরীক্ষা্র প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সফল হতে হলে এই বইটিই যথেষ্ট। ১৮তম নিবন্ধন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ কমনপ্রাপ্ত এবং সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই ছিল এটি। এর পাশাপাশি নমুনা ভাইভা সংযোজন করায় ভাইভা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে।
- কমন প্রশ্নের গ্যারান্টি:
বইটির একদম শুরুতেই গত বছরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কমন পাওয়া প্রশ্নগুলো পৃষ্ঠা নম্বরসহ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আপনি সহজেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং প্রস্তুতির জন্য সময়ও বাঁচবে।
- সহজবোধ্য বিন্যাস:
বইটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, যে কেউই কম সময় ব্যয় করে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো আয়ত্ত করতে পারবেন।
তাই, দ্রুত প্রস্তুতির জন্য এবং কম সময়ে বেশি ফল পেতে চাইলে NTRCA ডাইজেস্ট প্লাস হতে পারে আপনার পরীক্ষার সাফল্যের চাবিকাঠি।
Comments