একজন ভালো শিক্ষকের হাত ধরেই শুরু হয় একটি জাতির এগিয়ে চলা। আর
যদি বলি, বাংলাদেশের এক স্কুল শিক্ষিকার নাম উঠে এসেছিল বিশ্বের সেরা শিক্ষকের সংক্ষিপ্ত
তালিকায়! শুনে গর্বে বুক ভরে ওঠে, তাই না? শাহানাজ পারভীন—একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষিকা, যিনি প্রমাণ করেছিলেন, শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষে আটকে থাকে না, বরং বিশ্বমঞ্চেও
আলো ছড়াতে পারে।
প্রতিবছর লাখো চাকরিপ্রার্থী প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়
অংশ নেন, কারণ এই পেশাটি শুধু একটি চাকরি নয়, বরং সম্মান, দায়িত্ব ও দেশ গঠনের এক অনন্য
সুযোগ। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫,৫৬৭টি, আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর
অনুপাত ১:২৯—অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের তুলনায় দক্ষ শিক্ষকের এখনো বড় চাহিদা রয়েছে।
২০২৫ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষক
নিয়োগ হতে যাচ্ছে, যা এই পেশায় আগ্রহীদের জন্য বিশাল সুযোগ! কিন্তু কেমন এই চাকরির
বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ? পদোন্নতির সম্ভাবনা কতটুকু? যদি শিক্ষক হতে চান, তাহলে
আপনার জন্য ‘সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক’ পদ টি উপযুক্ত কিনা?
আজকের এই ব্লগে আমরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর
খুঁজবো, যাতে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে— ‘প্রাথমিক শিক্ষক’ পদে যোগ দেয়া কি হতে পারে
আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত?
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা:
জানুন বিস্তারিত!
শিক্ষকতা শুধু একটা চাকরি নয়, এটা সম্মান,
দায়িত্ব আর ভবিষ্যৎ গঠনের এক অনন্য সুযোগ। যারা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক হতে চান বা
ইতোমধ্যে হয়েছেন, তাদের জন্য সুখবর—সরকারি এই চাকরির সঙ্গে আছে ভালো বেতন কাঠামো, নানা
ভাতা এবং পদোন্নতির সুযোগ! চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের
বেতন ও অন্যান্য সুবিধা।
নতুন সহকারী শিক্ষকের বেতন কত?
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,
১৩তম গ্রেডের আওতায় নতুন সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতন ১১,০০০ টাকা। তবে এটি ধাপে ধাপে
বাড়তে পারে, সর্বোচ্চ ২৬,৫৯০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়াও, বেতনের
সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ভাতা:
●
চিকিৎসা ভাতা:
১,৫০০ টাকা
●
টিফিন ভাতা:
২০০ টাকা
●
যাতায়াত ভাতা:
৩০০ টাকা
বাড়িভাড়া ভাতা এর হিসাবটা কেমন?
এলাকার ওপর ভিত্তি
করে বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারিত হয়:
●
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন:
মূল বেতনের ৬০%
●
অন্যান্য সিটি
কর্পোরেশন ও পৌর এলাকা: ৪৫-৫০%
এতে করে ঢাকা সিটিতে একজন নতুন সহকারী শিক্ষকের
মোট বেতন দাঁড়ায় ১৯,৫০০ টাকা, আর অন্যান্য এলাকায় ১৭,৯৫০ থেকে ১৯,৫০০ টাকা হতে পারে।
উৎসব ভাতা ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি
শিক্ষকদের জন্য
উৎসব ভাতা থাকছে:
●
বছরে ২টি উৎসব ভাতা, যা মূল বেতনের সমান
●
বৈশাখী ভাতা মূল বেতনের ২০%
●
প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বেতন বৃদ্ধি
ক্যারিয়ার গ্রোথ ও পদোন্নতির সুযোগ
শুধু সহকারী
শিক্ষক হিসেবে আটকে থাকার সুযোগ নেই! ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে:
● সহকারী প্রধান শিক্ষক
● প্রধান শিক্ষক
● শিক্ষক প্রশিক্ষক
●
উপজেলা বা জেলা
শিক্ষা কর্মকর্তা (নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে)
আরেকটি সুবিধা হচ্ছে
টাইম স্কেল। প্রাইমারিসহকারী শিক্ষকগণ চাকরিজীবনে কর্মদক্ষতার
ভিত্তিতে দুইবার পদোন্নতি
পাবেন।
অন্যান্য সুবিধা যা জানলে আপনি অবাক হবেন!
●
কল্যাণ তহবিল থেকে জরুরি সহায়তা পাওয়া যায়।
●
বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে, প্রাথমিক
শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে।
●
৫ বছর চাকরির পর থেকে পেনশন সুবিধা নিশ্চিত।
●
এলপিআর (Leave Preparatory to
Retirement) সুবিধা পাওয়া যায়।
● ৬৫
বছর বয়সের পর চিকিৎসা ভাতা।
● প্রশিক্ষণের
সময় অতিরিক্ত ভাতা।
কোটা ব্যবস্থা: কি বদলাচ্ছে?
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন একটি
প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের
৯৩% নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে, আর অবশিষ্ট ৭% কোটার ভিত্তিতে।
এটি অনেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি আপডেট,
বিশেষ করে যারা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধারণা
করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ বাতিল হতে
পারে এবং নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদের আকর্ষণীয় দিকগুলোর
পাশাপাশি কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চলুন, এবার সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক।
১. তুলনামূলক কম বেতন
অন্য অনেক সরকারি চাকরির তুলনায় প্রাথমিক
শিক্ষকদের বেতন তুলনামূলক কম। যেহেতু এটি ১৩তম গ্রেডের একটি চাকরি, তাই বেতন কাঠামোও
সেই অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তবে, সরকার ইতোমধ্যে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
উন্নত করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এই কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তন
আসবে।
২. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়
প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে, শিক্ষকদের
নিজেদের উদ্যোগেই দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হয়, যা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৩. প্রয়োজনীয় উপকরণ ও অবকাঠামোগত সমস্যা
প্রাথমিক শিক্ষকদের কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়
উপকরণের অভাব ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে
পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা, আধুনিক শিক্ষাসামগ্রী বা প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকে না, যা শিক্ষাদানের
মানকে প্রভাবিত করে।
৪. অতিরিক্ত প্রশাসনিক কাজের চাপ
শুধু শিক্ষাদান নয়, অনেক সময় প্রাথমিক শিক্ষকদের
বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজেও যুক্ত হতে হয়। এতে তাদের মূল শিক্ষাদান কার্যক্রমের ওপর বাড়তি
চাপ সৃষ্টি হয়।
কিন্তু, পরিবর্তন আসছে!
প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু
সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনা সরকার পর্যালোচনা করছে।
সহকারী শিক্ষক নয়, বরং সরাসরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষক হিসেবে ১২তম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৪ বছর চাকরি করার পর ১১তম গ্রেডের সিনিয়র শিক্ষক
পদে পদোন্নতির সুযোগ থাকবে।
প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি হচ্ছে, যাতে পদোন্নতি
প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হয়।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
সুতরাং, যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, তবে প্রাথমিক
শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি সম্ভাবনাময় হতে চলেছে।
পরিশেষে,
সম্মান, স্থিতিশীলতা আর ভবিষ্যৎ গঠনের অনন্য সুযোগ—এই তিনটি বিষয়
একসঙ্গে যদি কোথাও মেলে, তবে সেটা নিশ্চিতভাবেই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকতার পেশা! যদিও
কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে ইতোমধ্যে সরকার বেতন কাঠামো, পদোন্নতির সুযোগ ও প্রশিক্ষণের
বিষয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কাজ করছে।
আপনার লক্ষ্য যদি হয় "একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক
ক্যারিয়ার", তাহলে প্রাথমিক শিক্ষক হওয়া শুধু একটা চাকরি নয়, বরং একটি স্মার্ট
সিদ্ধান্ত হতে পারে! সময় এখন প্রস্তুতির—একটি ছোট উদ্যোগই হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে
বড় পরিবর্তনের কারণ!
আপনার লক্ষ্য
যদি থাকে ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ’ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া তবে বিদ্যাবাড়ির প্রাইমারিডাইজেস্ট প্লাস এবংPrimary Adv. Special Care Live
batch-17-টি হতে পারে আপনার প্রস্তুতির জন্য অনবদ্য
কিছু। বিগত বছরগুলোতে বিদ্যাবাড়ির সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ‘প্রাইমারি শিক্ষক
নিয়োগ’ পরীক্ষায় সফলতার মাইলফলক তৈরি করেছে।
এছাড়াও, ২০২৫-এও
তাই প্রাইমারিশিক্ষক নিয়োগে শতভাগ সফলতার টার্গেট করে প্রস্তুতিকে পূর্ণাঙ্গ করতে বিশেষ এক্সাম
ব্যাচ এর আয়োজন করেছে বিদ্যাবাড়ি।
তাই, নির্দ্বিধায়
বলা যেতেই পারে,
‘লক্ষ্য
যদি হয় প্রাইমারির, বিকল্প নেই বিদ্যাবাড়ির’।
প্রাইমারি নিয়ে
আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন ,এখানে।
Writer - হুমায়রা
ইয়াসমিন
Comments