আপডেট:
14 May 2025
যে ৫ টি কারণে আপনার ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া উচিত

আপনি কী জানেন? ১৪ টি সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছরের শুরুতেই বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি !
২০২৫-এ বাংলাদেশে চাকরির বাজারে সবচাইতে চাহিদা সম্পন্ন ক্যারিয়ারের প্রশ্ন যদি আসে, তবে নিঃসন্দেহে সেটা হবে ‘ব্যাংকিং ক্যারিয়ার’। দেশের দ্রুত গতিতে বিকাশমান অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধির মূলে আছে এই ব্যাংকিং সেক্টর। এখানে রয়েছে স্থিতিশীল ক্যারিয়ার গড়ার নিশ্চয়তা।
কিন্তু, তারপরেও প্রশ্ন থাকে যে, কি কারনে তরুণরা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের দিকে ঝুঁকছে? তাহলে, চলুন জেনে নেয়া যাক, কেন ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠন হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত!
ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক তাহলে,
১. বৈচিত্র্যময় পজিশন আর দায়িত্ব
ব্যাংকে চাকরি মানেই টাকা গোনা!
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষদের মাঝে প্রচলিত একটি অতি পরিচিত ধারণা। এটা অবশ্যই সম্পূর্ণ সত্য নয়। এই পেশায় আছে বহু বৈচিত্র্য, যেমন-
ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট , ক্রেডিট ম্যানেজার, ডিজিটাল ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ, আইটি স্পেশালিস্ট ইত্যাদি।
অর্থ্যাৎ, আপনি আইটি এন্থুসিয়াস্টিক হলেও ব্যাংকে আইটি স্পেশালিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার দরজা আপনার জন্য সর্বদাই খোলা থাকবে। যদি ভালোবাসেন সংখ্যা নিয়ে খেলতে, তবে ফিনান্সিয়াল অ্যানালিসিস এর পদটি আপনার করে নিতে পারেন।
ব্যাংকে চাকরির সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট কি জানেন? আপনি ক্যাশিয়ার পদে জয়েন করেও পদোন্নতি পেয়ে জিএম হতে পারেন। কেননা, ব্যাংকে পদোন্নতির সুযোগ অন্যান্য যেকোনো সরকারি চাকরির তুলনায় অনেক বেশি।
তবে, প্রতি পদেই আছে চ্যালেঞ্জ। যা আপনার পজিশনকে করবে আরও গুরুত্বপূর্ণ আর সম্মানিত।
ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতিতে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইলে ক্লিক করুন।
২. ব্যাংকে চাকরিতে আছে আকর্ষণীয় বেতন ও সুবিধা
ব্যাংক মানে টাকার বাড়ি! তাই বেতন সেখানে আকর্ষণীয় হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি ফ্রেশার বা নতুন গ্র্যাজুয়েটও হন, তবুও এখানে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হতে পারে ৩০ হাজার টাকা বেতনের মাধ্যমে। আর যদি হয় বেসরকারি ব্যাংক তবে শুরুটা হতে পারে ৩০- ৫০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে এবং সেটিও এমটিও পদেই। আর সুবিধা?
বোনাস, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, স্বাস্থ্যবীমা, লাঞ্চ ভাতা, মাঠ পর্যায়ে প্রজেক্টের ক্ষেত্রে যাতায়াত ভাতা ইত্যাদি তো আছেই। আছে লিয়েন, ডেপুটেশন সুবিধাও।
ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার প্রথম অংশের সফল সমাপ্তির পর ৩৫ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার সুবিধা আছে, আবার দ্বিতীয় অংশের সমাপ্তির পর এই প্রণোদনার হার হয়ে যাবে ৫০ হাজার টাকা।
এছাড়াও, সকল ব্যাংকেরই কিছু নিজস্ব লোন পলিসি থাকে। এটা এক রকমের বাড়তি সুবিধা বলা যেতে পারে।
এই পেশার আরেকটা সুবিধা হচ্ছে যে, বড় ব্যাংকগুলোর অনেক শাখা থাকায় আপনি নিজ উপজেলা বা জেলাতে পদায়ন পেতে পারবেন। আর যেসব ব্যাংকের শাখা কম থাকে, তারা সচরাচর বড় শহরেই নিয়োগ দিয়ে থাকে।
কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর দেশের বাইরেও শাখা আছে। সেক্ষেত্রে আপনার কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আপনার বেতন এবং বিদেশে ট্রান্সফার হওয়া নির্ধারণে।
ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতিতে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইলে ক্লিক করুন।
৩. চাকরির নিরাপত্তা
অন্যান্য সরকারি চাকরির মতোই সরকারি ব্যাংকিং সেক্টরের চাকরিতে আছে নিরাপত্তা। সহজেই চাকরি না চলে যাওয়ার নিশ্চয়তা। বাজার অস্থির থাকুক কিংবা অর্থনৈতিক মন্দা লাগুক ব্যাংকিং সেক্টর থাকে সর্বদা স্থিতিশীল। অবশ্য, বেসরকারি ব্যাংকও কিছু কম নয়। এখানেও সুযোগ থাকে দ্রুত পদন্নোতি আর দারুণ একটা ক্যারিয়ার পাথ গঠনের। তাই এখানেও সহজে স্থায়ী হয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা আছে।
৪. দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়নে অবদান
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডই হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টর। আপনি এখানে কাজ করছেন,তার মানে সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন। যখন আপনি ছোট কোন ব্যবসার জন্যও ঋণ অনুমোদন করেন, তখন আপনি কেবল গ্রাহককে স্বচ্ছল হতে কিংবা নিজের ক্যারিয়ার তৈরিতেই সহযোগিতা করছেন না। আপনি সেই মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকাও ঘুরিয়ে দিচ্ছেন!
৫. ভ্রমণ ও নেটওয়ার্কিং
কাজের সুবাদে দেশ কিংবা বিদেশ, যেকোনো জায়গায় ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন আপনি ব্যাংকিং পেশায়। প্রশিক্ষণ, শাখা পরিদর্শন অথবা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিতি ও নেটওয়ার্ক তৈরি করার সুযোগ পাবেন। আপনার ব্যাক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সমৃদ্ধি অর্জনে এসব অভিজ্ঞতা বেশ দুর্দান্ত ভূমিকা রাখবে।
ব্যাংকে চাকরির চ্যালেঞ্জসমূহ
সুযোগ-সুবিধার কথা তো হলো কিন্তু চ্যালেঞ্জ গুলো!
ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে রয়েছে প্রচুর সুযোগ তবে সাথেই আছে প্রচুর চ্যালেঞ্জও। কখনো কখনো প্রচুর কাজের চাপ হবে, বিশেষত মাস শেষে আর টার্গেট পূরণের সময়ে। কাজের চাপ থাকলেও গ্রাহকদের সাথে কথা বলতে হবে ধৈর্য ধরে। করতে হবে জটিল আর্থিক সমস্যার সমাধান। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারে আপডেট না থাকলে তাল মিলিয়ে চলা হয়ে যেতে পারে চ্যালেঞ্জিং। তবে, আপনি যদি দৃঢ় প্রত্যয়ী হন এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার মনোবল রাখেন তবে দিন শেষে আপনিই জয়ী হবেন।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কী পার্থক্য আছে?
ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় যে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছুটা তারতম্য থাকে। যেখানে সরকারি ব্যাংকগুলোতে যেকোনো বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা আবেদন করতে পারে, সেখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাবসা শিক্ষা বিভাগের গ্র্যাজুয়েট ও ভালো সিজিপিএ ধারীরা অগ্রাধিকার পায়। সরকারি ব্যাংকগুলো যেমন নিয়োগের ক্ষেত্রে একইরকম নীতিমালা, রুলস, রেগুলেশন অবলম্বন করে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ব্যপারটি এমন নয়। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের সাধারণ নীতিমালার বাইরে আবার নিজস্ব কিছু নীতিমালাও থাকে।
সাধারণত সদ্য স্নাতক সম্পন্নকারীরা শুরুতে তিনটি পদে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আবেদন করতে পারবে-
সুপারভাইজার,
অফিসার ও
সিনিয়র অফিসার।
আর বেসরকারি ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ৪ টি এন্ট্রি পয়েন্ট দেখা যায়। যেমন-
টেইলরড রিক্রুটমেন্ট (Tailored Recruitment)
জেনারেল ব্যাংকিং রিক্রুটমেন্ট (General Banking Recruitment)
ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার ( Management Trainee Officer (M.T.O) ) এবং
প্রবেশনারি অফিসার (Probationary Officer (P.O) Recruitment) ও
লেটারাল রিক্রুটমেন্ট ( Lateral Recruitment)।
টেইলরড রিক্রুটমেন্ট
এই পদের ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিয়ে বলি।
ধরুন, কোন একটা বেসরকারি ব্যাংকে আইটি স্পেশালিস্ট পদটি খালি। তারা তখন সেই পদে নিয়োগের জন্য পোস্টের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিবে। যারা এই পদ্ধতিতে নিয়োগ পাবেন তাদের পুরো ব্যাংকিং ক্যারিয়ারই আইটি সংক্রান্ত পোস্টের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে। আর একে ব্যাংকিং এর ভাষায় বলে টেইলরড রিক্রুটমেন্ট।
আবেদনের জন্য যোগ্যতা সচরাচর যেকোনো বিষয়ে স্নাতক হয়ে থাকে। তবে, কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট বিষয়ে স্নাতক চেয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিজিডি থাকলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
জেনারেল ব্যাংকিং রিক্রুটমেন্ট
একটি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার আলাদা আলাদা পদে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া এটি। এ পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা খুব দ্রুত পদোন্নতি পায়। আবেদনের জন্য বেশি কিছু লাগবে না, শুধু সকল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও স্নাতকে ২য় শ্রেণি থাকলেই চলবে।
এমটিও রিক্রুটমেন্ট
একে প্রবেশনারি রিক্রুটমেন্টও বলা হয়ে থাকে। এ পদে খুব যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হয়। মূলত, এমটিও দের প্রথম দিকে কোন পদ থাকে না। পর্যাপ্ত ট্রেইনিং ও প্রবেশনারি পিরিয়ড শেষে এমটিও দের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা এবং অবশ্যই ব্যাংকের নীতিমালার ভিত্তিতে প্রিন্সিপল অফিসার বা সিনিয়র অফিসার পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এমটিও থেকে ধাপে ধাপে এমডিও হতে পারবেন। উদাহরণ? ব্যাংকগুলোতে অসংখ্য পরিমাণে রয়েছে এমন উদাহরণ।
এমটিও হতে সাধারণ গ্র্যাজুয়েট হলেও চলবে। তবে, কিছু বেসরকারি ব্যাংক এমটিও নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। যেমন- গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক ব্যাংকিং জব নিউজ আপডেট
ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরির চাহিদা ২০২৫-এ এসে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ৬০৮ টি শূন্য পদে। নিয়মিত ভাবেই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও বিভিন্ন পদে প্রচুর নিয়োগ চলছে। যেমন- এশিয়া পিলসিতে হেড অব ফরেন রেমিট্যান্স (ভিপি-এসভিপি) পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। জাপান ডেস্কে- রিলেশনশিপ ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক পিএলসি। শুধু ফাইন্যান্স সেক্টরেই নয়, ডিজিটাল ব্যাংকিং/ ফিনটেকেও চাহিদা বাড়ছে দক্ষ জনবলের। ব্যাংকে সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আপনি পেয়ে যাবেন এখানে।
নিচে, বাংলাদেশের প্রথম সারির কিছু সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওয়েবসাইটের লিংক দেয়া হলো। যেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দের ব্যাংকগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাবেন।
সরকারি ব্যাংকসমূহ | বেসরকারি ব্যাংকসমূহ |
বাংলাদেশ ব্যাংক- |
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড |
অগ্রণী ব্যাংক- |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড |
রুপালী ব্যাংক-
| ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল)
|
কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড- | প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড
|
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক- | ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড |
বেসিক ব্যাংক লিমিটেড- | ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড
|
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক | এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড
|
জনতা ব্যাংক লিমিটেড |
গ্রামীণ ব্যাংক |
পরিশেষে,
ব্যাংকিং সেক্টরে শুধু একটি চাকরি নয়, এখানে আপনি পাবেন আর্থিক স্বাধীনতা, সামাজিক সম্মান এবং ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগও। দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ডে কাজ করার গর্ব, দেশ বিদেশের দক্ষ মানুষদের সাথে কাজ করে নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ। নিজেকে প্রতিনিয়ত দক্ষ করে তোলার সুযোগ এই পেশাকে করেছে আকর্ষণীয়। তাই, যদি আপনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন এবং দেশের জন্য কিছু করতে চান, তাহলে ব্যাংকিং পেশা আপনার জন্যই !